সুলতানা পারভীন শ্রাবণী

আবৃত্তি ও সঙ্গীতশিল্পী, সংগঠক, শিক্ষক। সংস্কৃতি অঙ্গনে শ্রাবণী সুলতানা নামে পরিচিত। ২০০১ সালে যুক্ত হন আবৃত্তি সংগঠন দৃষ্টি বগুড়া জেলা শাখার সঙ্গে। সেই থেকে গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন আবৃত্তিতে। ব্যক্তিগতভাবে আবৃত্তি চর্চার পাশাপাশি আবৃত্তির সাংগঠনিক চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন। দলের জন্য অসংখ্য আবৃত্তি প্রযোজনা নির্মান করেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন। সঙ্গীত ও দৃশ্যকাব্যের সংযোজনে আবৃত্তিতে রুপ দিয়েছেন ভিন্নমাত্রা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য আবৃত্তি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আবৃত্তি করেছেন, তুলে ধরেছেন দেশের লোকজ সংস্কৃতি। বর্তমানে তিনি দৃষ্টি বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদসহ যে কোন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে স্থানীয় ও জাতীয় পযায়ে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। আবৃত্তির জন্য কবিতা বা গদ্য নির্বাচনে সচেতন ও রুচিশীল। ব্যক্তি ও সামস্টিক সংকট, প্রগতিশীল রাজনীতি ও মুক্তবুদ্ধি চর্চা, অসাম্প্রদায়িকতা ও স্বদেশপ্রেম- তার আবৃত্তির প্রধান উপজীব্য।

জন্ম ১৯৭৯ সালের ৮ অক্টোবর, বগুড়ায়। স্থায়ী ঠিকানা- চকসূত্রাপুর, বগুড়া সদর। বাবা আলহাজ সহিদুল ইসলাম। মা হোসনে আরা বেগম। চার বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী। স্বামী রবিউল আলম একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ শেষ করেছেন বগুড়াতেই। সরকার আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে সমাজবিজ্ঞানে ২য় মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছেন তিনি। উচ্চতর ডিগ্রির মধ্যে এমবিএ করেছেন ঢাকার উত্তরার এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে। বর্তমানে সিলেটের শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে এমফিল করছেন।

সংস্কৃতির পাশাপাশি শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পল্লীউন্নয়ন কর্মকান্ডেও যুক্ত তিনি। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত বগুড়ার মাটিডালির হাজী মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন কমার্স কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বেগম হোসনে আরা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এ ছাড়া শেরপুরের সাধুবাড়ি মডেল স্কুলের সভাপতি।

আর্ন্তজাতিক রোটারী ক্লাব অব বগুড়ার প্রেসিডেন্ট ,সেক্রেটারী এবং (এডুকেশন এন্ড লিটারেসি বিভাগের জোন চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন । ডায়বেটিস সমিতির আজীবন সদস্য , অতপ্রোত ভাবে জড়িত পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন বাপা এবং নিরাপদ শড়ক চাই আন্দোলনে। Life Membership No.: LBGD20200091. Long Live China-Bangladesh Friendship (CNFC).

২০১৪ সাল থেকে বগুড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমী, ২০১৩ সাল থেকে বগুড়া জেলা শিশু একাডেমি ও ২০১৫সাল থেকে বগুড়া জেলা প্রসাশক কাযালয়ের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আবৃত্তি শাখার বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

গড়ে তুলেছেন শ্রাবণী সুলতানা রক্তদান কেন্দ্র। বগুড়া সদরের শিশু ও নারী সচেতনমূলক ফাউন্ডেশন সোসাইটি ফর হেলথ এডুকেশন এন্ড বেসিক এডভান্সমেন্ট (SHEBA)ফাউন্ডেশন এর সভাপতি । এ ছাড়া রবিউল আর্ট প্রেস ও শ্রাবণী সুলতানা ডেইরি ফার্মের পরিচালক তিনি।

শ্রাবণী সুলতানার কর্মযজ্ঞ নিয়েও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সাক্ষাৎকার ও প্রতিবেদন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত ‘আবৃত্তিতে সুর তাল লয়ে এক নতুন ধারার সৃষ্টি ‘ ও ‘লড়াই নয়, এক সঙ্গে এগিয়ে চলা ‘, দৈনিক ইত্তেফাকে ‘জীবনের কঠিন বাঁকে সফল শ্রাবণী ‘ ও প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘পরিবারকে ফাঁকি দিয়ে পড়াশোনা করা সুলতানা আজ সফল’।

তিনি নিজেও বাংলা ও ইংরেজিতে লিখেছেন বেশি কিছু গবেষনাধর্মী প্রবন্ধ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- নিউ নেশন পত্রিকায় ‘Women empowerment of Manta Village in darkness’, আওয়ার টাইম পত্রিকায় “ Women’s Consciousness and Family Support Equally helpful for their participation in LG”. লিখছেন মান্তা সম্প্রদায়ের ওপর একটি গবেষণা গ্রন্থ।

দেশে বিদেশে অর্জন করেছেন বেশ কিছু পুরস্কার। আবৃত্তি সম্মাননা পেয়েছেন ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন, কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ড: ত্রিগুণা সেন মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে শৃন্বন্তু, বগুড়ায় নজরুল গবেষনা কেন্দ্র এবং এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ থেকে। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল রোটারি ফাউন্ডেশন ট্রাস্টিস দিয়েছে Paul Harris Foundation Certificate (PHF).

আবৃত্তি করতে, রোটারি ক্লাবের আন্তর্জাতিক সভাসেমিনার ও শিক্ষা সফর হিসেবে ভ্রমন করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। রোটারি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনে যোগ দিতে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায়। জাপানে রোটারি ক্লাব অব কোরাশিকি পরিদর্শন করেছেন। ঘুরে বেড়িছেন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান। অংশ নিয়েছেন নেপালের স্ট্রিট ফেস্টিভ্যাল, মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ উৎসবে, ভারতের দিল্লি, পুনা, শিলিগুড়ি, দার্জিলিংসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামুলক অনুষ্ঠানে।

প্রকাশ হয়েছে আবৃত্তির সিডি ‘স্বপ্নের চোখে জল’ ও ‘জলের তোড়ে টান পড়েছে’। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে নিয়মিত আবৃত্তি ও সঙ্গীত বিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। ‘শ্রাবণীর কবিতা চৌকাঠ’ নামে নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সেখানে নিয়মিত আবৃত্তি করছেন তিনি।

আবৃত্তি তার কাছে গণমানুষের অধিকার আদায়ের শক্ত প্লাটফর্ম। আবৃত্তির মধ্য দিয়ে তিনি মানুষকে বেঁচে থাকার আশা জোগান। সমতার রাষ্ট্র ও সমাজ গড়তে আবৃত্তি হয়ে ওঠে দীপ্ত কন্ঠে উচ্চকিত স্লোগান। নারী-পুরুষের ছোট ছোট কষ্ট, না পাওয়ার বেদনা, প্রেম-বিচ্ছেদ-বিরহ- ভাসিয়ে দেন হাওয়ায়। মানুষ স্বপ্ন দেখে ফের বেঁচে ওঠার, ভালবাসার। দীর্ঘ শ্রম ও অনুশীলনের মধ্য দিয়ে গতানুগতিক ফর্ম ভেঙ্গে তিনি আবৃত্তিকে করে তোলেন সার্বজনীন। তার আবৃত্তি মানেই বাঙময় হয়ে ওঠা মানুষের জীবনের গল্প।

আবৃত্তির মধ্য দিয়ে দেশকে তুলে ধরেন দেশের বাইরেও। সর্বধর্মের অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি ও বাঙালির হাজার বছরের লোকাচার, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধপরাধীদের বিচারে একট্টা গনআন্দোলন- এসবই তার আবৃত্তির উপাচার, জীবনাচার। যখন তিনি মঞ্চে ওঠেন, আবৃত্তির জন্য দাঁড়ান শ্রোতার সামনে, তখন তিনি একজন দীপ্যমান মানুষ। সবাইকে নিয়ে একসাথে আনন্দ-হাসিতে, আবৃত্তি-আড্ডায়, গানে-কথনে বেঁচে থাকাই তার কাছে জীবন।